রেজিস্ট্যান্স
ইলেকট্রনিক্স এর কম্পোনেন্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করার আগেই জানার প্রয়োজন হয় সেটা কি ধরনের কম্পোনেন্ট বা তার নাম কি, তার কাজ কি, কিভাবে তৈরি হয় ইত্যাদি। সর্বপ্রথম যে জিনিসটার কথা মনে পড়ে তা হলো রেজিষ্ট্যান্স। এর গুরুত্বও অপরিসীম। রেজিষ্ট্যান্স এর অর্থ হলো রোধ। রোধ-এর আক্ষরিক অর্থ হলো বাধা। যে তড়িৎ প্রবাহের বিরুদ্ধে বাধার কাজ করে তাকে রোধক বলে। পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহন আবার পরিবাহীর চরিত্রের ওপর নির্ভর করে, অর্থাৎ এক এক ধাতুর রোধাঙ্ক এক এক প্রকার। পরিবাহীর দৈর্ঘ্য, ব্যাস ( ডায়ামিটার ),পরিবাহীটি কতটা উত্তপ্ত প্রভিতির উপর তা নির্ভর করে। সুতরাং এক বর্গ একক পরিমাণের কোনও পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে যে পরিমাণ তড়িৎ এক সেকেন্ডে বাধা পায় তাকে রোধাঙ্ক বলে। পরিবাহীর রোধ R চিহ্ন দ্বারা সূচিত করা হয়। এবারে জানা যাক পরিবাহী কি কি বিষয়ের উপর, কি ভাবে রোধ পরিবর্তিত হয়। প্রথমেই পরিবাহী কি পদার্থ দিয়ে তৈরী হয়েছে তা দেখতে হবে। কারণ পরিবাহীর পদার্থের উপর তার মধ্যে দিয়ে কি পরিমান বিদ্যুৎ পরিবহন করবে তা নির্ভর করে। যেমন লোহার মধ্যে দিয়ে যে পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়, তার চেয়ে তামার মধ্য দিয়ে বেশি পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহ হতে পারে, সুতরাং তামার লোহা অপেক্ষা রেজিষ্ট্যান্স কম, আবার অন্য দিক থেকে বলা যায় তামা লোহা অপেক্ষা সুপরিবাহী। রেজিষ্ট্রীভিটি কম থাকার জন্য, পরিবাহীর দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে রোধও বেড়ে যায়। R ∝ L রেজিষ্ট্যান্স পরিবাহীর দৈর্ঘের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে পরিবর্তন হয়। L = দৈর্ঘ্য ও R = রেজিষ্ট্যান্স। আবার পরিবাহীর ব্যাসের উপর রোধ নির্ভর করে। যেমন--- ব্যাস যদি বাড়ে তাহলে রোধ কমে। অর্থাৎ পরিবাহীর রোধ তার ব্যাসের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতী। অর্থাৎ R ∝1/r এখানে r = ব্যাসার্ধ এবং R = রেজিষ্ট্যান্স। আবার পরিবাহীর ঘনত্ব বাড়লে রোধ কমে যায়। অর্থাৎ ঘনত্বের সঙ্গে পরিবাহীর রেজিষ্ট্রীভিটি ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়।
R ∝1 /D এখানে D = ঘনত্ব R = রেজিষ্ট্যান্স। আবার পরিবাহীর তাপমাত্রা বাড়লে রেজিষ্ট্রীভিটি বেড়ে যায়। অর্থাৎ পরিবাহীর তাপমাত্রার উপর রেজিষ্ট্রীভিটি সমানুপাতে পরিবর্তিত হয়। R ∝ t ,এখানে, t = তাপমাত্রা ও R = রেজিষ্ট্যান্স। রোধ পরিমাপের একক হলো ওহম, সাংকেতিক চিহ্ন 𝛀।
কোন পরিবাহীর মধ্যে এক ভোল্ট প্রয়োগ করলে এবং কারেন্ট পরিবহন এক এম্পিয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে যে পরিমান রোধের সৃষ্টি হয় তাকে এক ওহম বলে।
এই ওহম কে আবার 𝛀 (E) দ্বারা সূচিতকরতে হয়। 1000 𝛀 =1 kilo 𝛀, 1000 k𝛀 =1 Mega𝛀
রোধকের ক্ষমতার একক হলো ওয়াট। এর সাহায্যে রোধের কার্যকরী ক্ষমতা বোঝা যায়। অর্থাৎ প্রযুক্ত রেজিষ্ট্যান্সের মধ্য দিয়ে যদি বেশি এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে রেজিষ্ট্যান্সটি গরম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ফলে অচিরে পুড়ে যায়। তার হাত থেকে বাঁচার জন্য রেজিষ্ট্যান্সটি আরো বেশি ওয়াটের ব্যবহার করতে হয়, যাতে গরম কম হয়। তাই রেজিষ্ট্যান্সের ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার ওয়াটের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। যদি কোন সময় সঠিক ওয়াটের রেজিষ্টর পাওয়া না যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সবসময়ই বেশি ওয়াটের রেজিষ্ট্যান্স ব্যবহার করতে হবে, তাতে সার্কিটের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় যদি কম ওয়াটের রেজিস্ট্যান্স ব্যাবহার করা হয়, তাহলে সার্কিটের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কার্যকরী দিক থেকে রেজিষ্ট্যান্স দু' প্রকার যথা --- ভ্যারিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স ও ফিক্সড রেজিষ্ট্যান্স। যে সমস্ত রেজিষ্ট্যান্সের মান সহজে বা বাইরে থেকে পরিবর্তন করা যায় তাকে ভ্যারিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স বলে। আর যে সমস্ত রেজিস্ট্যান্সের মান স্থির থাকে, কোন প্রকারে পরিবর্তন করা যায় না, তাকে ফিক্সড রেজিষ্ট্যান্স বলে। গঠনগত দিক থেকে ফিক্সড রেজিষ্ট্যান্সেকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়--- ক) কার্বন রেজিষ্ট্যান্স খ) মেটাল ফিল্ম রেজিষ্ট্যান্স গ) ওয়্যার উন্ড রেজিষ্ট্যান্স। নিচে প্রতিটা রেজিষ্ট্যান্স এর গঠনগত এবং কার্যগত বিবরণ দেওয়া হলো---
ক) কার্বন রেজিষ্ট্যান্স
গ্রাফাইড গুঁড়োকে আঠা জাতীয় কোন পদার্থের সঙ্গে মিশিয়ে সিরামিকের কোন টিউবের মধ্যে ঢুকিয়ে গরম করা হয়, পরে দু'দিকে দুটো পরিবাহী তারের সঙ্গে যোগ করা হয়। এই ধরণের রেজিস্ট্যান্স প্রধানতঃ 1 𝛀 থেকে 20 M𝛀 এর মধ্যে হয় এবং ¼ থেকে 2¼W এর মধ্যে হয়। এই ধরনের রেজিষ্ট্যান্স এর গায়ে এর ভ্যালু বা মান লেখা থাকে অথবা চারটে করে রঙিন দাগ কাটা থাকে। এই কালার আবার ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয়। এক এক কালারের এক এক রকম মান থাকে। নিচে চার্ট দেখলে সেটা ভালোভাবে বুঝতে পারা যায়---
রেজিষ্ট্যান্স এর কালার কোড
প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ
কালো (Black ) ০ ০ x 1
বাদামী (brown ) 1 1 x 10
লাল (Red ) 2 2 x 100
কমলা (Orange) 3 3 x 1000
হলুদ (Yellow) 4 4 x 10000
সবুজ (Green) 5 5 x 100000
নীল (Blue ) 6 6 x 1000000
বেগুনি (Violet) 7 7
ধূসর (Gray) 8 8
সাদা (White) 9 9
সোনালী (Golden) x.1 ± 5%
রূপালী (Silver) ± 10%
কিভাবে রেজিষ্ট্যান্স ধরতে হবে তা বলি। প্রথমে দুটি লিডের যে কোনও দিকটা ধরে দেখতে হবে চারটি কালারের সোনালি কিম্বা রূপালী কালার কোন দিকে আছে। যে দিকটাতে ওই কালার আছে সেই দিকটাকে ডান সাইডে রেখে ধরতে হবে। তার পর বামদিক থেকে কি কি কালার আছে পর পর খাতায় লিখে যেতে হবে। ধরুন প্রথমে বাদামী তারপর লাল, তারপর কমলা। চতুর্থ রং আমরা ধরবো না কারণ ওই রং টলারেন্স নির্ধারণ করার জন্য ব্যাবহার হয়। তাহলে এবারে কি ব্যাপারে হলো দেখা যাক--- বাদামী প্রথম রং ,তাহলে তার জন্য তার নিচে 1 বসাতে হবে। দ্বিতীয় রং লাল তাই তার জন্য 2 বসাতে হবে এবং তৃতীয় রং কমলা আছে তাই গুণিতক চিহ্ন দিয়ে 1000 দিতে হবে। অর্থাৎ প্রথম দুটি সংখ্যাকে পাশাপাশি বসিয়ে যা হবে তার সঙ্গে 1000 দিয়ে গুন্ করতে হবে। তাহলে জিনিসটা দাঁড়াবে এমনি 12 x 1000 = 12000𝛀 অর্থাৎ 12000𝛀 এই ভ্যালু যুক্ত রেজিষ্ট্যান্সকে 1000 দিয়ে ভাগ করে তাকে কিলো ওহমস-এ লিখতে হবে। যথা-- 12000/1000 =12 k𝛀 নিচে আরো দু' চারটে উদাহরণ দেওয়া হলো, যা থেকে আরো পরিষ্কার হওয়া সহজ হবে---
লাল কমলা লাল
2 3 x100
23 x 100 = 2300𝛀 =2.3 k𝛀
বাদামী ধূসর কালো
1 8 x1
18 x 1 =18𝛀
সবুজ নীল হলুদ
5 6 x10000
56 x 10000 =560000𝛀 =560 k𝛀
বাদামী কালো সবুজ
1 0 x 100000
10 x 10000 = 10000 k𝛀
1000 k𝛀 =1 m𝛀
উপরের কয়েকটা উদাহরণ থেকে নিশ্চিত বুঝতে পারছেন। এবারে চটপট করার জন্য কালার কোড মুখস্ত করে ফেলুন। না দেখে মুখে মুখে ভ্যালু বের করার চেষ্টা করুন, নিশ্চিৎ বের করতে পারবেন।
কার্বন রেজিষ্ট্যান্সের টলারেন্সের একটা ভূমিকা রয়েছে , চতুর্থ রংটিকে কার্বন রেজিষ্ট্যান্সের টলারেন্স হিসাবে ধরা হয়। টলারেন্স কথাটির বাংলা অর্থ সহনশীলতা। সাধারণত বাজারে বিক্রীত কার্বন রেজিষ্ট্যান্সের মান পুরোপরি সঠিক থাকে না। টলারেন্সের ব্যপারটা সাধারণ ভাবে শত করা হিসাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। কার্বন রেজিষ্ট্যান্সের মান শত করা কত ভাগ কম বা বেশি হবে তা চতুর্থ রঙের উপর নির্ভর করবে। যেমন একটা রেজিষ্টরের মান যদি 100 ওহম হয় এবং তার কালার কোডের চতুর্থ রংটি যদি সোনালী (±5%) হয় তবে রেজিষ্ট্যান্সের মান (100-5) = 95 ওহমের থেকে (100+5) = 105 ওহমের কোন একটি হবে। সাধারণ ভাবে এর চেয়ে বেশি বা কম হবে না। আবার যদি চতুর্থ রংটি রুপালি হয় তবে সেই রেজিষ্ট্যান্সের টলারেন্স হবে ±10% কিন্তু যদি দেখা যায় কোনো রেজিষ্ট্যান্সের তিনটি মাত্র কালার রয়েছে তাহলে বুঝতে হবে সেই রেজিষ্ট্যান্সএর টলারেন্স ± 20% এখানে আর একটি জিনিস উল্লেখ করা যেতে পারে, তাহলো ফিলিপস কোম্পানির তৈরী রেজিস্টরের চতুর্থ রংটির ক্ষেত্রে লাল রং ব্যাবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে ওই লাল রঙের জন্য সেই রেজিস্টরের টলারেন্স হবে। ± 2% যে সার্কিটে যেমন টলারেন্সর রেজিষ্ট্যান্স ব্যাবহার হয়েছে, প্রয়োজনে সেই রেজিষ্ট্যান্স পরিবর্তন করা হলে পদার্থের টলারেন্স অনুযায়ী রেজিষ্ট্যান্স ব্যাবহার করতে হবে, কখনোই বেশি টলারেন্সর রেজিষ্ট্যান্স ব্যাবহার করা হলে তেমন কিছু অসুবিধা হবে না।
মেটাল ফিল্ম রেজিষ্ট্যান্স
কার্বন ফিল্ম রেজিষ্ট্যান্স এর মতো একটা ইনসুলেটর পাইপের উপর মেটাল ফিল্ম এর প্রলেপ দিয়ে ওয়্যারিং করা হয়। এই রেজিষ্ট্যান্স তৈরি করার সময় একটা ইনসুলেটর দরকার হয়। এখানে ইনসুলেটরের ওপর মেটাল ফিল্ম এর একটা পাতলা আবরণ দেওয়া হয়। পরে তার ওপর সংকর ধাতুর ওয়্যার (নাইক্রোম তার) জড়িয়ে একটা নিউট্রাল রং এ ডুবিয়ে নেওয়া হয় ফলে ওয়্যারগুলি দেখা যায় না।
ওয়্যার উন্ড রেজিষ্ট্যান্স
এই রেজিষ্ট্যান্স তৈরী করার জন্য এক বিশেষ শংকর ধাতুর তৈরী তার ( নাইক্রোম তার ) ব্যাবহার করা হয়। এই তারের বিশেষত্ব হলো এর রোধ প্রচুর পরিমানে বেশি। একটা ইনসুলেটর পাইপের উপর এই তার জড়িয়ে দু'মাথায় দুটো কানেকশান পয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পরে ঐ জড়ানো তারের উপর এক প্রকার সিমেন্ট বা সিরামিকের প্রলেপ দেওয়া হয়। যা বেশি তাপ থেকে রেজিষ্ট্যান্সকে রক্ষা করে। এই রেজিষ্ট্যান্স প্রধানতঃ 5 ওয়াট থেকে 200 ওয়াট এর মধ্যে হয়। গঠন অনুযায়ী এই রেজিষ্ট্যান্স আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা--- ফিক্সড রেজিষ্ট্যান্স ও ভ্যারিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স। কোন কোন ওয়্যার উন্ড যুক্ত রেজিষ্ট্যান্স নির্দিষ্ট ভ্যালু যুক্ত হয়ে থাকে। এই ভ্যালু এবং ওয়াট প্রধানতঃ ঐ সমস্ত রেজিষ্ট্যান্স এর গায়ে লেখা থাকে। কিছু কিছু ওয়্যার উন্ড রেজিষ্ট্যান্স থাকে যাদের মাঝখান থেকে একটা ট্যাপ বের করে কানেকশন ডিভাইড করানো হয় তাতে রেজিষ্ট্রীভিটি কম হয়ে যায়। এই ধরণের রেজিষ্ট্যান্সকে ট্যাপড ওয়্যার রেজিষ্ট্যান্স বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া এডজাষ্ট করার জন্য কয়েকটি পয়েন্ট যুক্ত থাকে যা এদিকে ওদিকে নিয়ে গেলে নানান প্রকারের ভ্যালু যুক্ত হয়ে থাকে, একে এডজাস্টেবল ওয়্যারউন্ড রেজিষ্ট্যান্স বলা হয়। এতক্ষন যে সমস্ত রেজিষ্ট্যন্স নিয়ে আলোচনা করলাম তা হলো ফিক্সড রেজিষ্ট্যান্স, এবারে যে রেজিষ্ট্যান্স নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো ভ্যারিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স।
ভ্যারিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স
যে সমস্ত জায়গায় রেজিস্ট্যান্সের মান পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় সে সমস্ত জায়গায় এই ভ্যারিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স লাগাতে হয়। এই রেজিষ্ট্যান্সের বাড়তি সুবিধা হলো, এর একটি ডাঁটি থাকে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাবস্থা থাকে, যা ঘুরিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো রেজিষ্ট্যান্সএর মান কমানো বাড়ানো যায়। এই রেজিষ্ট্যান্সের মান কমানো কিম্বা বাড়ানোর হারের হিসাবে এই রেজিষ্ট্যান্সকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা--- লগ যুক্ত ও লিন যুক্ত।
লগ যুক্ত
এই রেজিষ্ট্যান্স এর ডাঁটি ঘোরালে এর মান খুব দ্রুতহারে বাড়ে। সাধারণতঃ ভলিউম কন্ট্রোলের কাজে ব্যাবহৃত পরিবর্তনশীল রেজিষ্ট্যান্সের মান লগ যুক্ত হয়ে থাকে।
লিন যুক্ত
লিন যুক্ত রেজিষ্ট্যান্স প্রায় একই রকম দেখতে, এই রেজিষ্ট্যান্স এর মান লগযুক্ত রেজিষ্ট্যান্স অপেক্ষা অনেক কম হারে পরিবর্তীত হয়। অর্থাৎ ডাঁটি খুব বেশি ঘোরালে এর মানের হার আগের মতো পরিবর্তন হয় না, কিন্তু নির্দিষ্ট হারে পরিবর্তিত হয়। এই লিনযুক্ত ভ্যারিয়েবল রেজিষ্ট্যান্স আবার দু'ভাগে ভাগ করা হয়। যথা পটযুক্ত রেজিষ্ট্যান্স ও প্রিসেটযুক্ত রেজিষ্ট্যান্স। প্রধানতঃ টোন কন্ট্রোল, ব্রাইটনেস কন্ট্রোল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয় পটযুক্ত। অন্য প্রকার হলো প্রিসেট। প্রধানতঃ ইন্টারন্যাল সার্কিটে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে যা একবার ঘুরিয়ে এডজাস্ট করে দিলে পুনরায় না ঘুরানো পর্যন্ত আর এডজাস্ট করতে হয় না।
এছাড়া আরোও বিশেষ কিছু রেজিষ্টর আছে যেমন 1) V.D.R 2) L.D.R 3) Thermistor থার্মিষ্টার ইত্যাদি।
1) V.D.R-- পুরো কথাটির অর্থ হলো ভোল্টেজ ডিপেনডেন্ট রেজিষ্ট্যান্স। এটিও এক প্রকার পরিবর্তনশীল রেজিষ্ট্যান্স। কিন্তু এর মান ( ভ্যালু ) ভোল্টেজে কমা বাড়ার উপর পরিবর্ততিত হয়। এই রেজিস্ট্যান্সের আক্রোশে ( দুই প্রান্তে ) ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে ভোল্টেজ যদি বাড়ে তাহলে রেজিস্ট্যান্সের (V.D.R) মান (ভ্যালু )কমে যাবে। আবার প্রযুক্ত ভোল্টেজ যদি কমে তাহলে রেজিষ্ট্যান্সটির মান বেড়ে যায়।
V.D.R তৈরী হয় সাধারনত সিলিকন কার্বাইড বা জিঙ্ক কার্বাইড দ্বারা। মূলত অন্যান্য রেজিস্ট্যান্সের মান স্থির হলেও এর মান ভোল্টেজের কমা--বাড়ার ওপর নির্ভর করে বা ভোল্টেজের কমা--বাড়ার সাথে পরিবর্তনশীল। প্রযুক্ত ভোল্টেজ বাড়ালে V.D.R এর পর রেজিস্ট্যান্সের মান কমা--বাড়ার অনুপাত পরিবর্তিত হয়ে যায়।
V.D.R ভোল্টেজকে স্থির করতে কাজে লাগে এবং অনেক সময়ে সার্জ ভোল্টেজ থেকে প্রয়োজনীয় কম্পোনেন্টকে বাঁচানোর জন্য কাজে লাগে। সাধারণত হাই ভোল্টেজ রেঞ্জে এর ব্যাবহার বেশি।
2) L.D.R -- পুরো কথার অর্থ হলো লাইট ডিপেনডেন্ট রেজিষ্ট্যান্স। এই রেজিষ্ট্যান্স আলোক সংবেদনশীলতার ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত ক্যাডমিয়াম সালফাইড /ক্যাডমিয়াম সলোফাইড প্রভিতি ধাতব পদার্থ থেকে এই রেজিষ্ট্যান্স তৈরী হয়। এই রেজিষ্ট্যান্সের ওপর দিকে একটি জানালা (Window) থাকে যার মধ্যে দিয়ে আলোর প্রবেশ পথ করা থাকে। কঠিন অপরিবাহী পদার্থের উপর আলোক সংবেদনশীল (ক্যাডমিয়াম সালফাইড) আস্তরণ দেওয়া থাকে। সাধারণ অবস্থায় অন্ধকারে থাকা কালীন এই রেজিস্ট্যান্সের মান ( ভ্যালু ) অত্যাধিক বেশি হয় (মেগাও হয় ) কিন্তু এর উপর আলো পড়া মাত্রই এর মান খুবই কমে যায় ( মাত্র কয়েক ওহম )।
L.D.R একটি বহুল প্রচলিত রেজিষ্ট্যান্স। এর আলোক সংবেদনশীলতার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাদি এর সাহায্যে করা যায়। আবার কিছু কিছু হবি প্রজেক্টে এর ব্যাবহার খুবই আকর্ষণীয়। যেমন লাইট কাউন্টার, স্বয়ংক্রিয় কল, আকাশ প্রদীপ, আলো নিয়ন্ত্রিত সুইচ প্রভিতি ধরনের।
V.D.R যা ভোল্টেজ কমা বাড়ার উপর রেজিষ্ট্যান্সের মান কমে বাড়ে।
L.D.R যা লাইট এর তীব্রতার উপর রেজিষ্ট্যান্সের মান কমে বাড়ে।
3 ) Thermistor-- তাপমাত্রা কমা বাড়ার ওপর এই রেজিষ্ট্যান্সের মান কমা বাড়া নির্ভর করে। সেই হিসাবে এটিও একটি বিশেষ পরিবর্তনশীল রেজিষ্ট্যান্স।
থার্মিস্টর দু ধরণের হয় একটি - P.T.C ( পজিটিভ টেম্পারেচার কোয়াফিয়েন্ট /positive temperature co-efficient ) এবং অপরটি N.T.C ( নেগেটিভ টেম্পারেচার কোয়াফিয়েন্ট / Negative temperature co-efficient) এই দু ধরনের থার্মিস্টর খুবই প্রচলিত, কম্পিউটার টিভিতে এদের ব্যাবহার দেখতে পাওয়া যায়।
P.T.C পজিটিভ টেম্পারেচার কোয়াফিয়েন্ট / Positive temperature CO-efficient ) এই রেজিষ্ট্যান্সের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহে উদ্ভুত সামান্য তাপের সময়ে এর মান খুব কমে থাকে। কিন্তু উদ্ভুত তাপ যতই বাড়তে থাকে ততই এর মানও বেড়ে যায়। কোন কয়েল কিংবা বাল্ব বা অন্য কোন লোডের সঙ্গে সিরিজ কানেকশনে P.T.C যুক্ত করলে, প্রাথমিক অবস্থায় এর ভ্যালু কম থাকে কিন্তু একটু চলার পরই এর ভ্যালু বেড়ে যায় ও কয়েল কিংবা বাল্ব বা অন্য লোড সাপ্লাই কম পায়। এই ভাবে P.T.C এর সাহায্যে ওভার ভোল্টেজ, শট সার্কিট, ভোল্টেজ স্টেবিলাইজেশন প্রভৃতি কাজ করা যায়। এছাড়াও P.T.C র বহু প্রজেক্ট প্রয়োগ করা হয়।
N.T.C (নেগেটিভ টেম্পারেচার কোয়াফিয়েন্ট /Negative temperature CO-efficient)--- এই পরিবর্তনশীল রেজিষ্ট্যান্সেটির মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উদ্ভুত সামান্য তাপের সময়ে এর মান অত্যাধিক বেশি হয়। কিন্তু উদ্ভুত তাপ যতই বাড়তে থাকে এর মানও ততই কমে যায়। আয়রনের অক্সাইড অথবা নিকেল অক্সাইড থেকে N.T.C থার্মিস্টর তৈরী করা হয়। টেলিভিশন, কালার টেলিভিশন প্রভৃতি সার্কিটে N.T.C খুব বেশি ব্যাবহৃত হয়। সার্জ প্রোটেকশন ও সার্কিটের সুরক্ষার জন্যও থার্মিস্টর ব্যাবহার করা হয়।
ফিউসেবল রেজিষ্ট্যান্স ( fusible resistance )--- কোন সার্কিট বা তার উপকরনকে ওভার লোড (over load ) এ নষ্ট হয়ে যাবার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এই রেজিষ্ট্যান্সটির ব্যাবহার করা হয়। তাই একে সেফটি রেজিষ্ট্যান্স (safety resistance) ও বলে। এটি খুবই কম রোধযুক্ত এবং এটি নিম্ন গলনাঙ্ক বিশিষ্ট তারের সাহায্যে প্রস্তুত করা হয়। ফলে হঠাৎ সার্কিটে বেশি তড়িৎ প্রবাহ ঘটলে রেজিস্ট্যান্সটির তারটি খুব গরম হয়ে গলে যায় এবং সার্কিটকে মেইন অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে সার্কিটটি শর্ট হবার হাত থেকে বেঁচে যায়।
চিপ রেজিষ্ট্যান্স (chip resistance)--- বিশেষ কতকগুলি সুবিধা থাকার দরুন ও সেমি কন্ডাক্টার পদার্থ দিয়ে তৈরী এই চিপ রেজিষ্ট্যান্স আধুনিক সার্কিটে ( COMPUTER ) ব্যাবহার করা হয়। এটি আকারে ছোট, ফলে সার্কিটে কম স্থান ধারণ করে। এগুলি সঠিক মানের রোধ উৎপন্ন করতে পারে। এদের স্টেবিলিটি অনেক বেশি সাধারণ রেজিষ্ট্যান্সের থেকে এবং ভোল্টেজ লস হয়। এছাড়া এরা কোন ইন্ডাকট্যান্স বা ক্যাপাসিট্যান্স উৎপন্ন করে না। এর সবচেয়ে সুবিধা হলো অনেকগুলি রেজিষ্ট্যান্স একসাথে কাজ করে। এর বিভিন্ন পয়েন্ট বিভিন্ন ট্রাজিষ্ট্যান্স পাওয়া সম্ভব।
স্লাইডিং পট-- কিছু কিছু ভ্যারিয়েবল পট আছে যা ডাঁটি ঘোরানোর বদলে সরিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এগুলোকে স্লাইডিং পট বলে।
নেটওয়ার্ক রেজিষ্ট্যান্স (network resistance )--- একটি রেজিষ্ট্যান্সের মধ্যে অনেকগুলি সমমানের রেজিষ্ট্যান্স তৈরী হয় এর সুবিধা হচ্ছে এর ভিন্ন ভিন্ন অংশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন মানের রোধ উৎপন্ন হয় যা সার্কিটে অনেকগুলি রেজিষ্ট্যান্সের কাজ একের সাহায্যে করানো হয়। এর ভিতরে সিরিজ বা প্যারালাল অনেকগুলি রেজিষ্ট্যান্স যোগ করা থেকে। মোটামুটি রেজিষ্ট্যান্স সম্পর্কে জানা হলো---কি ভাবে কানেকশান করে তার ব্যাবহার করতে হয় তা নিয়ে এবারে আলোচনা করব। এ বিষয়ে আলোচনা করার পূর্বে ওহম এর সূত্র আমাদের জানা দরকার---
ওহম এর সূত্র--- কোন পরিবাহীর তাপমাত্রা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে পরিবাহীর প্রবাহ মাত্রা ও দু'প্রান্তের বিভব প্রভেদ সমানুপাতিক হারে পরিবর্তিত হয়। l =V/R যেখানে l= কারেন্টের জন্য এম্পিয়ার V= ভোল্ট R= রোধ এই সূত্রে থেকে আমরা আরো পাই যথা---V=l R ও R=V/l এই সূত্রের যে কোন দুটি জানা থাকলে তৃতীয়টি বের করা যাবে।
কানেকশন প্রণালী
একাধিক রেজিষ্ট্যান্সকে প্রধানতঃ দু'ভাবে কানেকশান করা হয়। যথা--- শ্রেণিবদ্ধ কানেকশান বা সিরিজ কানেকশান ও সমান্তরাল কানেকশান বা প্যারালাল কানেকশান। সিরিজ কানেকশান এর বেলায় একটা রেজিষ্ট্যান্স এর শেষ প্রান্তের সঙ্গে অপর একটা রেজিষ্ট্যান্সের প্রথম প্রান্ত যোগ করে এই কানেকশান করা যায়। এই ভাবে কানেকশন যুক্ত রোধকের মোট রোধ হবে---
R= r1 +r2 +r3
অর্থাৎ r1= 5𝜴, r2= 10𝜴, r3= 3𝜴 হলে তাহলে মোট রোধ হবে R= 5+10+3=18𝜴
রেজিষ্ট্যান্সের নির্দিষ্ট কোন দিক না থাকায় অর্থাৎ এর কোন পজেটিভ বা নেগেটিভ দিক নির্দিষ্ট না থাকায় একে যে কোন দিকেই কানেকশন করা যেতে পারে অর্থাৎ রেজিষ্ট্যান্সের সিরিজ কানেকশনের ফলে রেজিষ্ট্যান্সের মান বেড়ে যায়। কিন্তু প্যারালাল কানেকশনের ফলে রেজিষ্ট্যান্সের মান কমে যায়। অর্থাৎ যদি
r1=200𝜴, r2=150𝜴, r3=120𝜴, R=1/(1/r1+1/r2+1/r3)=1/(1/200+1/150+1/120)=1/{(6+8+10)/1200}
=1/(24/1200)=1200/24= 50𝜴
কখনো কাজের সময় নির্দিষ্ট ভ্যালুর রেজিষ্ট্যান্স না পাওয়া যায়, তাহলে তার কাছাকাছি কোন ভ্যালুর রেজিষ্ট্যান্স সেখানে লাগানো যেতে পারে।
রেজিষ্ট্যান্সের চেকিং পদ্ধতি
যে কোন রেজিষ্ট্যান্স চেক করার পূর্বে তার ভ্যালু এবং টলারেন্স সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকতে হবে। রেজিষ্ট্যান্সের ভ্যালু যদি (10 k) এর কম হয়, তাহলে মাল-টিমিটারের লাল প্রডটি (10 k) রেঞ্জে রেখে এবং রেজিষ্ট্যান্সের ভ্যালু যদি (10 k) এর বেশি ও 1M𝜴 এর থেকে কম হয় তাহলে লাল প্রডটা 1M𝜴রেঞ্জে রেখে মিটারের কালো এবং লাল প্রডটিকে যে রেজিষ্ট্যান্সকে পরীক্ষা করা হবে তার দুই প্রান্তের কানেকশনের তারের সাথে লাগাতে হবে। এই অবস্থায় যদি দেখা যায় ওই রেজিষ্ট্যান্সটির আসল ভ্যালুর চেয়ে মিটারে কম ভ্যালু বা বেশি ভ্যালু শো করছে কিম্বা মিটারে কোন রিডিং পাওয়া যাচ্ছে না, তখন বুঝে নিতে হবে ওই রেজিষ্ট্যান্সটি খারাপ হয়েছে ।
রেজিষ্ট্যান্সকে ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যাবহার করা হয়--
১) লোড বা সাপ্লাই হিসাবে---অনেক সার্কিটে প্রধানত একটি বা দুটি রেজিষ্ট্যান্সের মাধ্যমে কোন সাপ্লাই প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে সেই রেজিষ্টরগুলোকে লোড/সাপ্লাই রেজিষ্টর বলে।
২) ভোল্টেজ ডিভাইডার--- লোড রেজিষ্ট্যান্সের পরের ভোল্টেজ কে আরো কমানোর জন্য বা ভিন্ন ভিন্ন কম্পোনেন্ট এ দেওয়ার জন্য রেজিষ্ট্যান্সকে ব্যাবহার করা হয় তাকে ভোল্টেজ ডিভাইডার রেজিষ্ট্যান্স বলা হয়।
৩) সান্ট রেজিষ্ট্যান্স--- কোন যন্ত্র কিম্বা তার শাখা থেকে কোনও অতি সেনসিটেবল কম্পোনেন্ট এ সাপ্লাই দিতে ( প্ৰধানত কোনও মিটার ) সে ক্ষেত্রে যাতে অতিরিক্ত ভোল্টেজে সেটি সহজে নষ্ট হয়ে না যায় তার জন্য প্যারালালে একটা রেজিষ্ট্যান্স লাগানো থাকে ফলে অতি বেশি ভোল্ট এলে ঐ সান্ট রেজিষ্ট্যান্স এর মধ্যে দিয়ে তা বাইপাস করে যেতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই